বাংলাদেশ একটি অপার সম্ভাবনার দেশ। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক নিদর্শন, জাতিগত বৈচিত্র্য এবং সমৃদ্ধ সংস্কৃতি একে পর্যটনের এক বিস্ময়কর ভুবনে পরিণত করেছে। অথচ পর্যটন শিল্প এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনীতিতে তার পূর্ণ অবদান রাখতে পারেনি। এই অবস্থার পরিবর্তন আনতেই "জাতীয় পর্যটন অলিম্পিয়াড" আয়োজনের প্রয়োজনীয়তা সামনে এসেছে—যেখানে দেশের শিক্ষার্থীরা পর্যটন ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানবে, আগ্রহী হবে এবং একদিন এ ক্ষেত্রের নেতৃত্বে এগিয়ে আসবে।
জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থা (UNWTO)'র তথ্য অনুযায়ী, পর্যটন বর্তমানে বিশ্বের মোট GDP-এর প্রায় ১০% অবদান রাখছে এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৩০০ কোটি মানুষকে কর্মসংস্থানের সুযোগ দিচ্ছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে পর্যটন শিল্প GDP-এর ৯.২% এবং প্রায় ৪.২ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। সেখানে বাংলাদেশের অবদান মাত্র ৪.৪% (WTTC, 2023)। অথচ বাংলাদেশে রয়েছে ৩টি UNESCO World Heritage Site, শতাধিক পর্যটন গন্তব্য এবং প্রায় ৫০টি জাতিগোষ্ঠীর নিজস্ব সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য—যেগুলো সঠিকভাবে প্রচারিত ও রক্ষণাবেক্ষিত হলে দেশীয় ও বৈদেশিক পর্যটকদের বড় একটি অংশ আকর্ষণ করা সম্ভব।
তবে এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে প্রয়োজন মানবসম্পদ উন্নয়ন, পর্যটন জ্ঞানচর্চা এবং সাংস্কৃতিক সচেতনতা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে পর্যটনকে অন্তর্ভুক্ত করা এখন সময়ের দাবি। জাতীয় পর্যটন অলিম্পিয়াড সেই চর্চার একটি সূচনা বিন্দু। এটি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান, ঐতিহাসিক নিদর্শন, জাতিগত বৈচিত্র্য ও বিশ্ব পর্যটনের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে জানবে এবং পর্যটনের উন্নয়নে নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পারবে।
বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশ এই জাতীয় পর্যায়ের অলিম্পিয়াডের আয়োজন করে থাকে। যেমন: India's Tourism Quiz Olympiad, China’s Youth Heritage Awareness Competition, UNESCO World Heritage Education Programme; এই উদ্যোগগুলো কেবলমাত্র শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞান বাড়ানোর জন্য নয়, বরং সচেতন নাগরিক তৈরির মাধ্যম হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে।
বাংলাদেশে শিক্ষার্থীরা এখনও পর্যন্ত পর্যটনকে মূল ধারার পেশা বা পড়াশোনার বিষয় হিসেবে চিন্তা করে না। কিন্তু বাস্তবতা হলো, পর্যটন এখন একটি পূর্ণাঙ্গ শিল্প—যেখানে রয়েছে ম্যানেজমেন্ট, হসপিটালিটি, গাইডিং, ডেস্টিনেশন ব্র্যান্ডিং, ইকো-ট্যুরিজম, ট্রাভেল জার্নালিজম সহ বিভিন্ন সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার অপশন। অলিম্পিয়াডের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাঝে সেই আগ্রহ সৃষ্টি করাই এই উদ্যোগের প্রধান উদ্দেশ্য।
অন্যদিকে, একটি দেশের পর্যটন শিল্প শুধু ভ্রমণ নয়; এটি পরিচিতি, কূটনীতি ও সংস্কৃতির বাহক। বিশ্ব আজ সফট পাওয়ারের যুগে — যেখানে সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও পরিবেশ-সচেতন পর্যটন দেশের সম্মান ও অর্থনীতিকে এগিয়ে নিচ্ছে। বাংলাদেশের পর্যটনকে যদি ভবিষ্যতের তরুণেরা বুঝে ও ভালোবাসে, তাহলে দেশও এগিয়ে যাবে।
তাই জাতীয় পর্যটন অলিম্পিয়াড শুধুমাত্র একটি প্রতিযোগিতা নয় — এটি একটি জ্ঞান, চেতনা ও দায়িত্ববোধের আন্দোলন। এটি একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের কাছে পর্যটনের বৈচিত্র্য ও সৌন্দর্যকে তুলে ধরবে, তেমনি তাদের মধ্যে দেশের প্রতি ভালোবাসা ও সংরক্ষণ মনোভাব জাগিয়ে তুলবে।
পর্যটন অলিম্পিয়াডের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
জাতীয় পর্যটন অলিম্পিয়াডের প্রধান লক্ষ্য হলো দেশের বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পর্যটন, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং তাদের জ্ঞান, কৌশল ও দৃষ্টিভঙ্গির উন্নয়ন ঘটানো। এই অলিম্পিয়াড এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে যেখানে শিক্ষার্থীরা শুধু জ্ঞান অর্জন করেই থেমে থাকবে না, বরং তারা নিজেদের চিন্তা, বিশ্লেষণ ও নেতৃত্বের মাধ্যমে পর্যটন খাতের ভবিষ্যৎ পথনির্দেশক হয়ে উঠবে।
স্কুল পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা (৬ষ্ঠ-১০ম শ্রেণি) এই অলিম্পিয়াডের মাধ্যমে দেশের দর্শনীয় স্থান, নদ-নদী, পাহাড়, বন, উৎসব ও জাতিগোষ্ঠী সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা লাভ করবে। এতে তাদের মধ্যে ছোটবেলা থেকেই দেশের সৌন্দর্য ও বৈচিত্র্যকে জানার আগ্রহ সৃষ্টি হবে এবং দেশের প্রতি ভালোবাসা বাড়বে।
কলেজ পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা (একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি) এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে টেকসই পর্যটন, পরিবেশ-সংরক্ষণ, স্থানীয় সংস্কৃতির প্রভাব এবং ভ্রমণ-ভিত্তিক অর্থনীতি সম্পর্কে বিশ্লেষণমূলক ধারণা অর্জন করতে পারবে। এ স্তরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতৃত্বগুণ, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা ও তথ্য-ব্যাখ্যার ক্ষমতা বাড়বে।
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা এই অলিম্পিয়াডের মাধ্যমে পর্যটন ও হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট, কালচারাল স্টাডিজ, ইকো-ট্যুরিজম ও ট্রাভেল জার্নালিজম-এর মতো বিষয়গুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাবে। এতে তারা ভবিষ্যতে পর্যটন খাতে গবেষণা, উদ্ভাবন এবং ক্যারিয়ার গঠনে অনুপ্রাণিত হবে।
এ ছাড়াও, অংশগ্রহণকারীরা জাতীয় পর্যায়ে নিজের জেলা বা অঞ্চলকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারবে, যা তাদের মধ্যে গর্ব ও দায়িত্ববোধ তৈরি করবে। এই অলিম্পিয়াড শুধু একটি জ্ঞানমূলক প্রতিযোগিতা নয়—এটি একটি চেতনা, যা তরুণ প্রজন্মকে সচেতন পর্যটক এবং দেশের প্রতি দায়িত্ববান নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে।
প্রতিযোগিতার ধরণ
জাতীয় পর্যটন অলিম্পিয়াড একটি বহুধারার প্রতিযোগিতা, যা জ্ঞান, বিশ্লেষণ, সৃজনশীলতা ও সাংস্কৃতিক সচেতনতা নির্ভর। প্রতিযোগিতা মূলত তিনটি স্তরে অনুষ্ঠিত হবে: স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়। প্রতিটি স্তরে প্রশ্নপত্রের ধরণ ও মান একই হবে। প্রতিযোগিতাটি দুইটি পর্ব ও ৬ টি ধাপে অনুষ্ঠিত হবে —
২. প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনের জন্য রেজিস্ট্রেশন ফিঃ ৯৯টাকা নির্দিষ্ট পেমেন্ট মাধ্যমে প্রেরন করতে হবে। পরবর্তী কোন রাউন্ডে আলাদা ফি প্রদান করতে হবে না।
৩. রেজিস্ট্রেশনের পর ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অংশগ্রহণকারীর মোবাইলে একটি SMS পাঠানো হবে। যেখানে অংশগ্রহণকারীর নাম, রেজিস্ট্রেশন কনফার্মেশন ও ইউনিক আইডি নম্বর থাকবে। এই আইডি নম্বরটি পরবর্তী রাউন্ডে ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করতে হবে।
৪. রেজিস্ট্রেশন লিংক ও প্রয়োজনীয় তথ্য অফিশিয়াল ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিদ্যালয় ও কলেজে বিতরণকৃত প্রচারপত্রে পাওয়া যাবে।
৫. রেজিস্ট্রেশন ফর্মে পূরণকৃত সকল তথ্য সঠিক হতে হবে। ভুল বা মিথ্যা তথ্য প্রদান করলে আবেদন বাতিল হতে পারে।
বি.দ্র. রেজিঃ ফি ফেরতযোগ্য নয়।
বাছাই পর্ব
১. বাছাই পর্বের প্রতিটি রাউন্ডের নির্ধারিত পরীক্ষা শুরুর ২৪ ঘণ্টা পূর্বে অংশগ্রহণকারীর ইমেইলে পরীক্ষার লিংক পাঠানো হবে। এবং পরীক্ষার ৩ ঘণ্টা পূর্বে অলিম্পিয়াডের ফেসবুক পেজে সতর্কতা পোস্ট প্রকাশ করা হবে। অংশ নাও
২. ইমেইলে পাওয়া পরীক্ষার লিঙ্কটি শুধুমাত্র নির্ধারিত সময়েই কার্যকর (active) থাকবে এবং সময়সীমা শেষ হলে অটোমেটিকভাবে বন্ধ (off) হয়ে যাবে।
৩. কেউ যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ইমেইলে পরীক্ষার লিংক না পেয়ে থাকে, তবে পরীক্ষা শুরুর আগেই অবশ্যই যোগাযোগ করতে হবে।
৪. পরীক্ষার নির্ধারিত সময় মিস করলে তার সম্পূর্ণ দায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর—এক্ষেত্রে আয়োজক কর্তৃপক্ষ দায়ভার গ্রহণ করবে না।
চূড়ান্ত পর্ব
১. চূড়ান্ত পর্ব ঢাকায় সরাসরি আয়োজিত হবে। এই পর্বের প্রথম রাউন্ড অর্থাৎ পাইওনিয়ার রাউন্ডে প্রতিযোগিকে নিজ খরচে যাতায়াত ও আবাসন (যদি প্রয়োজন হয়) ব্যাবস্থা করতে হবে। তবে দুপুরের খাবার প্রদান করা হবে।
২. পরবর্তী রাউন্ড অর্থাৎ আইডল ও চ্যাম্পিয়ান রাউন্ডে কর্তৃপক্ষ প্রতিযোগীদের আবাসন ও যাতায়াতসহ সম্পূর্ণ খরচ বহন করবে।
৩ টি ক্যাটাগরি থেকে শিক্ষার্থীগন এই অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ করতে পারবে -
১. ক বিভাগ (৬ষ্ঠ - ৮ম শ্রেনী)
২. খ বিভাগ (৯ম - ১২শ শ্রেনী )
৩. গ বিভাগ (বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী)
পুরষ্কার
যোগাযোগ
প্রয়োজনে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন-
১২ আইনুসবাগ, দক্ষিনখান, ঢাকা - ১২৩০
📧 Email: nto.visitbangla@gmail.com
📞 ফোন: 01600891233
📱 ফেসবুক: fb/national tourism Olympiad
🌐 Website: www.tourismolympiad.bd